ডাকরা গ্রামটি বর্তমান বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার পেরিখালি ইউনিয়নের অন্তর্গত। বিগত ১৯৭১-এ এই বাগেরহাট জেলাটি খুলনা জেলার একটি উপ-বিভাগ ছিল।
মংলা নদীর দক্ষিণ তীরে ডাকরা ছিল একটি হিন্দু প্রধান গ্রাম। একটি নামকরা কালীমন্দির ছিল এই গ্রামে। মন্দিরের সেবাইত ছিলেন নকড়া ঠাকুর ওরফে বকবক চক্রবর্তী ।
১৯৭১-এর এপ্রিলেই রাজাকার বাহিনী ডাকরা গ্রামকে টার্গেট করেছিল। সে সময় গ্রামের হিন্দুদের ওপর রাজাকাররা অত্যাচার শুরু করে। হিন্দুদের ঘরবাড়ি লুটপাট করে।
এরপর ১৯৭১-এর মে মাসের মাঝামাঝি নাগাদ তৎকালীন পূর্ব বঙ্গের অবিভক্ত বরিশাল জেলার পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা ও বরিশাল সদর উপ-বিভাগসহ অবিভক্ত খুলনা জেলার বাগেরহাট উপ-বিভাগের হিন্দুরা ডাকরা গ্রামের ওপর দিয়েই কয়েক হাজার হিন্দু ভারতে পালাতে থাকেন।
আর এর জেরেই ১৯৭১-এর ২১ শে মে ভারতে আসার তোড়জোড় করছিলেন ১০ হাজার হিন্দু শরণার্থীর দল। কিন্তু তার আগেই ডাকরা গ্রামে পৌঁছে যায় রাজাকার বাহিনী। ওইদিন বিকেলে রাজাকার নেতা রজব আলী ফকিরের নেতৃত্বে রাজাকারের দুটি দল দুটি নৌকোয় চেপে আক্রমণের উদ্দেশ্যে ডাকরা গ্রামে এসে হাজির হয়।
প্রথম নৌকোটি এগোতে থাকে কালীগঞ্জ বাজার পেরিয়ে মাদারতলী খালের দিকে। আর দ্বিতীয়টি কুমারখালি খাল বরাবর মাদারীতলা খালের দিকে এগোতে থাকে। দ্বিতীয় নৌকো থেকে নেমেই রাজাকারের দল গুলি চালায়। ইতিমধ্যে প্রথম নৌকো থেকেও রাজাকাররা নেমে কালীমন্দিরের দিকে এগোয় এবং সেখানে গুলি চালাতে থাকে।
মন্দির এলাকায় ভিড়ের মধ্যে গুলি চলে। প্রাণভয়ে অনেকে ঝাঁপ দেন নদীতে। রাজাকার বাহিনী নদীতেও গুলি চালায়। নদীর জলে গুলিবিদ্ধ হোন দেড়শো জনেরও বেশি মানুষ ।
এরপর রাজাকারের দল ঢোকে ডাকরা গ্রামে। সেখানে লুটপাট করে আগুন জ্বালিয়ে দেয় তারা। ধর্ষণ করা হয় গ্রামের নিরীহ নারীদের। পরে বেছে বেছে সুন্দরী নারীদের যৌন দাসী হিসেবে ধরে নিয়ে যায় আক্রমণকারী রাজাকারের দল।
সব মিলিয়ে ১৯৭১-এর ২১ শে মে রাজাকার বাহিনীর হাতে প্রায় দু’হাজারেরও বেশি শিশুসহ হিন্দু নরনারীর প্রাণ যায়। এই ঘটনা ডাকরা গণহত্যা নামে পরিচিত।
পরবর্তীকালে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার পাকিস্তানপন্থী জামায়াতে ইসলামী নেতা এ.কে.এম. ইউসুফের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধ অপরাধের অভিযোগ আনে এবং ডাকরা গণহত্যার জন্য ইউসুফকেই সরাসরি দায়ী করা হয়।
২০১০-এ ডাকরা গণহত্যা স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের উদ্যোগে শহীদদের স্মরণে এখানে এক স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয় ।
