নালন্দার উঁচু পাঁচিলের সামনে দাঁড়িয়ে খ্রোথুলোৎসার নিজেকে ক্ষুদ্র মনে হয়েছিল। এ-ই তবে সেই জ্ঞানের ধারক এবং বাহক নালন্দা? খ্রোথুলোৎসা তিব্বতী অনুবাদক – শ্রমণ। নালন্দা দর্শনে এসেছিলেন। বহু কথা ও কাহিনি শুনেছেন নালন্দা নিয়ে। কতই না কিংবদন্তী শুনেছেন একে ঘিরে। শুনেছেন বক্তিয়ারের আক্রমণে ধ্বংস হয়ে যাওয়া নালন্দার তিন মহাবৈভবের কথাও।
মহাবৈভব?
১১৯৩ খ্রিস্টাব্দ। তুর্কি -বর্বর ইখতিয়ার উদ্দীন মুহম্মদ বিন বক্তিয়ার খিলজির আক্রমণে ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছিল নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন – তিনটি মহার্ঘ সম্পদালয়, তিনটি সুবিখ্যাত গ্রন্থাগার –রত্নদধি, রত্নসাগর এবং রত্নরঞ্জক।
নালন্দার প্রাঙ্গনে পা রাখলেন খ্রোথুলোৎসা। কিন্তু কী দেখলেন? দেখলেন এক অশক্ত বৃদ্ধ অধ্যাপক ধ্বংসস্তুপের মধ্যে বসেই পাঠদান করে চলেছেন ছাত্রদের। নিরলস তাঁর অধ্যবসায় – বিদ্যার জ্যোতি যাতে থাকে অনির্বাণ।
অনেক কথাই তো শুনে এসেছিলেন খ্রোথুলোৎসা। অনেক চরিত্রের নামও জানতেন তিনি। সেইসব চরিত্ররা খিলজির আক্রমণের সামনে খড়কুটোর মতো উড়ে গেলেও পুঁথিপত্র এবং গ্রন্থাগারগুলিক ে বাঁচাবার সমস্ত সম্ভাব্য প্রয়াস করেছিল। খ্রোথুলোৎসা চিনতে পেরেছিলেন সেদিনের সেই বৃদ্ধ অধ্যাপককে। রাহুলশ্রীভদ্র। খিলজির আক্রমণ কালে তিনি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম স্তম্ভ। স্বচক্ষে দেখেছিলেন বক্তিয়ারের তলোয়ার। এইসব কথা তিনি বলেছিলেন খ্রোথুলোৎসাকে। আজকের নালন্দা দেখলে অবশ্য তা সবই শুধু গল্প বলে মনে হয়। তবুও ইতিহাস তো ইঁট – কাঠ – পাথরের পাঁজরেই কথা কয়। ফিসফিস করে।
আসুন না, একটি বার সময় – অভিযানের মাধ্যমে ফিরে যাই সুদূর ইতিহাসের পাতায়। মধ্যে মধ্যে নাহয় আজকের নালন্দাকেও দেখে নেব। গুণে নেব আগুনে পোড়া ইঁটের সংখ্যা।
আচ্ছা, কাজটা কি ভীষণ কঠিন?
আমরা কি পারব গুণতে?
লক্ষ – কোটি সূর্য – শশীর মতোই যে লাখে – কোটিতে সাজানো রয়েছে পোড়াদাগের ইঁট। তারা আজও সমবেতভাবে চিৎকার করে বলছে, এই কালো দাগ এক উন্মত্ত আক্রমণকারীর অহংকারের চিহ্ন। তোমরা তাকে ভুলে গেলেও ইতিহাস ভোলেনি। ভারতের কি ক্ষতি যে সে করে গেছে তা সে নিজেও বোঝেনি।
পাঠকবন্ধু, একটি বার চোখ বুজুন। ফিরে চলুন অতীতে। ওই তো নালন্দা। উজ্বল। ভাস্বর স্বমহিমায়। যার গ্রন্থাগারের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। বিশ্ববিদ্যালয় রূপে ভূষিত নালন্দা। আপনারা আজ অনেকেই ভারতের ধরোহরকে অমান্য করতে ব্যগ্র হয়ে ওঠেন। নিজের বুকে হাত রেখে সেই সময়ে বিখ্যাত (অন্য দেশের) পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম মনে করার চেষ্টা করুন তো। বলুন তো সেই যুগের পাঁচটি ভিনদেশী বিশ্ববিখ্যাত গ্রন্থাগারের নাম। আপনাকে বেগ পেতেই হবে মাননীয়। বলতে হয়তো পারবেন। কিন্তু সঙ্গে স্বীকার করতেই হবে প্রথমেই ভেসে উঠবে একটিই বাক্য – ইশ! নালন্দা – তক্ষশিলাই তো ধরা যাচ্ছে না। এই ছিল আমাদের ভারতবর্ষ। সরস্বতীর আসন যেথা।
চোখ বন্ধ করলে আজও আমরা দেখতে পাই দশহাজার ছাত্র একইসঙ্গে বিদ্যার এক মহামন্দিরে পঠনে পাঠনে রত। কোনো কোলাহল নেই। অথচ বিদ্যায়, পঠনে মুখর। তিনটি রত্নাগারের মতো পাঠাগার। কতই না মূল্যবান পুস্তক। বৌদ্ধ শিক্ষায়তন হলেও এখানে থরে থরে সাজানো ছিল সনাতন ধর্মের অজস্র পুঁথি, ধর্মগ্রন্থ, সাহিত্যগ্রন্থ। শোনা যায় বহুতল ছিল গ্রন্থাগার। নিশ্চয়ই ছিলেন এক বা একাধিক দক্ষ গ্রন্থাগারিক। হয়তো তিনি বা তাঁরা নিহত হয়েছিলেন খিলজি বাহিনীর হানায়।
বুদ্ধ –জীবন, বৌদ্ধ ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্মের ব্যাখ্যা নিয়ে ছিল অজস্র প্রন্থ। অনুবাদের কাজও হতো গ্রন্থাগারে। মহাবিদ্যালয়ের মহাধক্ষ্য ছিলেন শাক্যশ্রীভদ্র। শোনা যায় যে, তিনি পঞ্চসিদ্ধাচার্য ের পুঁথি নির্বাচিত করে দিয়েছিলেন অনুবাদের জন্য। কে ছিলেন এই পঞ্চসিদ্ধাচার্য ? শীলভদ্র, জ্ঞানমিত্র, জিনমিত্র, শান্তরক্ষিত এবং শবরীপাদ। দিকে দিকে এভাবেই জ্ঞানের আলোক ছড়িয়ে দিয়েছিল নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় এবং তার তিনটি গ্রন্থাগার।
আসুন ফিরে একবার সমকালে। আজ সরকার নির্ধারিত রীতিতে চল্লিশজন ছাত্র পিছু একজন শিক্ষককে স্থির করা হয়ে থাকে। বর্ধিত ছাত্রসংখ্যাই এর বড় কারণ। এবার তাকাই অতীতে –নালন্দায় সাতজন ছাত্র পিছু থাকত একজন শিক্ষক। কী অদ্ভুত বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে ছিল শিক্ষাব্যবস্থা!
ভাবলে কষ্ট হয় যে, কী এমন ক্ষতি হতো যদি নালন্দাকে না জ্বালিয়ে ছেড়ে দিত খিলজি? একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কী এমন ক্ষতি করতে পারে এক বর্বরের? কীসের এত রাগ – দ্বেষ?
একটা অদ্ভুত কিংবদন্তী আছে –খিলজি বাহিনী নালন্দার দিকে এগোচ্ছিল। দলপতি বক্তিয়ার দুর্ধর্ষ হলেও সে কোনো পুরোনো রোগে ভুগত। নালন্দার কাছাকাছি তাঁবু গেড়ে থাকার সময়ে সেই পীড়া ভয়ানক বেড়ে যায়। প্রায় মরো মরো দশা হয়। হাকিম, দাওয়া, দোয়া কিছুতেই কোনো কাজ হচ্ছিল না। তখনই কোনো মাধ্যম দ্বারা বক্তিয়ার শোনেন যে, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাবিদ্যা বিভাগের অন্যতম তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাহুলশ্রীভদ্র চিকিৎসায় অসামান্য রকমের পারদর্শী। গোপনে রাহুলকে গিয়ে জানানো হল যে, খিলজি তাঁর চিকিৎসাপ্রার্থী । অন্য শ্রমণরা জানতেন কিনা বলা মুশকিল। কিন্তু রাহুল একজন চিকিৎসক রূপে নিজের রোগীকে প্রত্যাখ্যান করতে পারেননি। হোক না সে বর্বর। কিন্তু অদ্ভুত কট্টর, বদমেজাজ, খিটখিটে খিলজি বিরাট পরীক্ষার মুখে ফেলে রাহুলকে। সে বলেছিল যে, তাকে স্পর্শ না করে, কোনো ওষুধ না খাইয়ে সুস্থ করে তুলতে হবে। তবেই সে মানবে ভারতের চিকিৎসা বিদ্যা শ্রেষ্ঠ। রাহুল হাসিমুখে মেনে নিয়েছিলেন সেই শর্ত। শুধু বলেছিলেন, আপনার থেকে আপনার ধর্মগ্রন্থ কোরান চেয়ে নিয়ে গেলাম। ফিরিয়ে দিয়ে যাব।
কোরান ফিরিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন রাহুল। আর তার কিছুদিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে ওঠে খিলজি। কীভাবে? অদ্ভুত বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছিলেন রাহুল। খিলজির সঙ্গে সামান্য সময়ের সাক্ষাৎকারে লক্ষ্য করেছিলেন কোরানের পাতা ওল্টাবার বেলায় থুতু ব্যবহার করে খিলজি। সেই কোরানের প্রতি পাতায় মাখিয়ে দিয়েছিলেন দরকারী ওষধির লেপ। খিলজি সেটাকেই ভেবে নিয়েছিল চমৎকার। একজন বিজেতা কখনো নিজের দ্বারা বিজিত জাতির শ্রেষ্ঠ হওয়া মেনে নিতে পারে না। তাই তার পথে যা কিছু শ্রেষ্ঠ তা সে নষ্ট করে দেয়। আর যা কিছু শ্রেষ্ঠ তা সবসময়েই নিষ্কবচ।
ঈর্ষায় আতুর এক আক্রমণকারী সেদিন সিদ্ধ করে দিয়েছিল যে পিশাচের কোনো মিত্র থাকতে পারে না। হাতেগোণা ক’জন ঘোড়সওয়ার নিয়ে ওদন্তপুরী মহাবিহার নষ্ট করার পরে খিলজি এগিয়েছিল নালন্দার দিকে।
নিরীহ কয়েকজন বৌদ্ধ ভিক্ষু। এমন দুর্ধর্ষ শত্রুর সম্মুখীন হতে হবে একথা তাঁরা স্বপ্নেও কল্পনা করেননি। হাজার হাজার শিক্ষার্থী মরেছিল। নিহত হয়েছিল দেশের বিশারদ সব শিক্ষক। দাউ দাউ করে জ্বলেছিল তিনটি মহান গ্রন্থাগার। সেই আগুন নাকি জ্বলেছিল পরের ছয়মাস ধরে। সাহিত্যিক হিমাদ্রীকিশোর দাশগুপ্তর উপন্যাসিকা ‘কত কক্ষে কাগজ পোড়ে’তে তিনি এই গ্রন্থাগার নষ্ট হওয়া এবং সেখানে বৌদ্ধ শ্রমণদের দ্বারা গ্রন্থ রক্ষা করার এক অদ্ভুত প্র্যাসের কথা লিখেছেন। যেহেতু তা ‘ফিকশন’, তাই সেখানে সত্যাসত্য প্রমাণের দায় লেখকের নেই। তবুও তা রোচক। গ্রন্থের পাতায় পাতায় নাকি লাগানো হয়েছিল কোনো অদ্ভুত রাসায়নিক দ্রব্য। তারই গুণে পাতাগুলি হয়ে উঠেছিল অগ্নিনিরোধক। ‘কক্ষ’ মানে এখানে কামরা নয়, তাপের মাপকাঠি। সর্বোচ্চ মাত্রা অবধি তাপ সহন করার মতো গ্রন্থগুলিকে প্রস্তুত করে তুলেছিলেন বৌদ্ধ ভিক্ষু তথা শিক্ষকের দল। অনেক গ্রত্নহ নাকি গ্রন্থাগার থেকে তিব্বতে পাঠাবার ব্যবস্থা করেছিলেন তাঁরা। বহু দুর্মূল্য গ্রন্থ নাকি পাঠানো হয়েছিল অধুনা বাংলাদেশের রক্তমৃত্তিকা মহাবিহারে। আমরা বক্তিয়ারের এই নির্মম অভিযানের কথা জানতে পারি মিনহাস উস সিরাজের ‘তবাকত ই নাসিরি’ বইটি থেকে।
বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই মহাবিদ্যালয় আসলে ছিল অরক্ষণীয়। একজন দ্বারপাল একটি সাধারণ লাঠি নিয়ে বসে থাকত। তাঁর কাজ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আগত ছাত্রকে প্রশ্ন করে তাঁর বুদ্ধি এবং বিচক্ষণতার পরীক্ষা করা। ভাবুন তো, যে জায়গার দ্বারপালের এত জ্ঞান সেই স্থান কতখানি মহান ছিল। কিন্তু শস্ত্রের সামনে হার মেনেছিল শাস্ত্র। খাগের কলম এবং হংসের পালকে লেখা পুঁথির কালি ম্লান হয়ে গিয়েছিল মানুষের রক্তের লালের কাছে। বিদ্যার জ্যোতিকে ছাপিয়ে গিয়েছিল তিনটি গ্রন্থাগার – পোড়ানো আগুনের লেলিহান শিখা। একটি গ্রন্থাগার নাকি ন’তলা ভবন ছিল। পরবর্তী কয়েকমাস গ্রন্থাগারের আগুনেই মাংস ঝলসে খেয়েছিল খিলজির অসভ্য দলটি।
গ্রন্থাগারের বেশ কিছু অমূল্য রত্ন তিব্বতে গিয়ে পৌঁছায় বলেই বৌদ্ধ ধর্ম চর্চার এক অন্যতম প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয় তিব্বত। পরবর্তীকালে মহাপন্ডিত রাহুল সাংকৃত্যায়নের হাত ধরে সেইসব মহাগ্রন্থের অনেকটাই ফিরে আসে প্রতিলিপি রূপে। আমরা তাঁর কাছে চিরকৃতজ্ঞ।
নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই খন্ডহর খুঁজে বের করেছিলেন অ্যালেকজান্ডার ক্যানিংহ্যাম। হিউয়েন সাং এর বিবরণ থেকে নালন্দার রূপরেখা পাওয়া যায়। তিনি নিজে এখানে বিদ্যার্থী ছিলেন। পরে শিক্ষকও। চিন, তিব্বত, কোরিয়া, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, পারস্য, তুর্কি থেকে ছাত্ররা আসত এখানে। নালন্দার স্থাপনার শ্রেয় গুপ্ত শাসক কুমারগুপ্তের।
আমরা দ্বারপালের কথা পড়লাম। দেখুন সুধী পাঠক, আজকের ‘এন্ট্রান্স টেস্ট’ই আমাদের দ্বারপাল। ‘গেটপাস’। অবশ্য সেখানে পুঁজিই সব কিছুর নিয়ন্ত্রক। একদা মহান গণিতজ্ঞ আর্যভট্ট নালন্দার কুলপতি ছিলেন। এসব তো আমাদের অনেকের কাছেই বিস্ময়ের বিষয়। কারণ পুঁজিবাদ আমাদের কাছ থেকে শিক্ষাকে কেড়ে নিয়েছে। রাজনীতি শিখিয়েছে ইতিহাসের নামে অর্ধসত্য।
বক্তিয়ার খিলজি ভেঙে দিয়ে গিয়েছিল। আমরা আর জুড়তে পারিনি। আমরাও তো ব্যর্থ। দোষী সমানভাবে। ভারতে ‘প্রাইভেট ট্যুইশন’ প্রথার প্রথম প্রবর্তক সম্ভবত মহাভারতের অন্যতম চরিত্র গুরু কৃপ। এবং পরে দ্রোণ। এর আগে বা পরে আর তেমন কিছু কই মনে তো পড়ে না। অন্তত প্রামাণ্য তথ্যে তো নয়ই। আজ ছাত্রদের পক্ষ নিয়েই বলি, অর্থ দ্বারা পোষিত শিক্ষকই নিজের কোনো ভাবশিষ্যের আঙুল চেয়ে নিতে পারেন। তিনিই পারেন একপক্ষের ছাত্রদের হয়ে অপর পক্ষের ছাত্রদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নিতে। অবাক করার মতোই একটি তথ্য উঠে আসে নালন্দার ছাত্র এবং শিক্ষকদের ভরণ – পোষণের ক্ষেত্রে –সেখানে আশপাশের একশোটি গ্রাম থেকে অর্থসাহায্য তুলে দেওয়া হতো নালন্দার জন্য। তাই শিক্ষাব্যবস্থা ছিল বিনামূল্যে।
সাতটি সুবৃহৎ কক্ষ এবং তিনশোটি অধ্যাপনা কক্ষের সন্ধান মেলে নালন্দায়। কেবল ছাত্রাবাসের দিকে নজর দিলেই মনে হবে যে, আজকের দিনের ‘হোস্টেল’ ব্যবস্থাও তার পাশে মলিন। ছাত্রাবাসের কক্ষে শোওয়ার জন্য পাথরের চৌকি, রাতের অধ্যয়নের জন্য আলোর উত্তম ব্যবস্থা, বই রাখার জন্য তাক ইত্যাদি ছিল।
অধিক বরিষ্ঠ ছাত্রদের জন্য পৃথক কক্ষ থাকত। কনিষ্ঠ ছাত্ররা একজন বরিষ্ঠ ছাত্রের সঙ্গে একই কক্ষে থাকত। নতুন বিদ্যার্থীর মার্গদর্শন করতে পারত বরিষ্ঠ ছাত্ররা। আজকাল তার বদলে আমরা কী পেয়েছি? ‘Ragging’।
অধিক বরিষ্ঠ ছাত্রদের জন্য পৃথক কক্ষ থাকত। কনিষ্ঠ ছাত্ররা একজন বরিষ্ঠ ছাত্রের সঙ্গে একই কক্ষে থাকত। নতুন বিদ্যার্থীর মার্গদর্শন করতে পারত বরিষ্ঠ ছাত্ররা। আজকাল তার বদলে আমরা কী পেয়েছি? ‘Ragging’।
এসব ছাড়াও প্রার্থনা কক্ষ, অধ্যয়ন কক্ষ, স্নানাগার, উদ্যান ছিল। বিদ্বানেরা ব্যাখ্যা করতেন। নিজেদের সমস্ত প্রশ্ন, সকল শঙ্কা নিরসন করে নিতে পারত ছাত্রের দল। বেদ, বিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান , সাংখ্য, বাস্তুশাস্ত্র, শিল্প, মূর্তিকলা, ব্যাকরণ, দর্শন, শল্যবিদ্যা, যোগবিদ্যা, চিকিৎসাশাস্ত্র সবেরই পাঠ হতো নিরন্তর।
বক্তিয়ার ছিল মূর্খ। তাকত দিয়ে বাংলা আর বিহার দখল করেছিল। কিন্তু তিব্বত আর চিন জয় করতে গিয়ে নাস্তানাবুদ হয়েছিল তার বাহিনী। সে নিজেও আধমরা হয়ে ফিরে আসে দেবকোটে। সেখানেই তার এক সহায়ক আলিমর্দানের হাতে নিহত হয় বক্তিয়ার। কিন্তু ওই হত্যা, ওই নিধন তার পাপের সাজা হতে পারে না। নালন্দায় জ্বালিয়ে দেওয়া হাজার হাজার গ্রন্থের চাইতে বিলুপ্ত হওয়া জ্ঞান তোমার জীবনে অভিশাপ নিয়ে আসুক খিলজি। তোমার আত্মার গতি হোক অশ্বত্থামার মতো। দোযখেও যেন শান্তি না মেলে তোমার।
খিলজির কবর আজ পীরের মাজার হয়ে গেছে। কোথায় জানেন? আমাদের এই বাংলায়। দক্ষিণ দিনাজপুরের মাটিতে। লোকে মানত চাইতে যায় সেখানে। ইতিহাস কথা বললেও এক্ষেত্রে বোবা হয়ে গেছে যেন। নইলে মানুষ ভুলে গেল একজন হন্তারককে? ভুলে গেল সে ভারতের কী ক্ষতি করেছিল? ভুলে গেল নালন্দার দহন? ভুলে গেল তিনটি গ্রন্থাগারের ছাইয়ের স্তূপ? ওখানেই তো ছিল সরস্বতীর আসন!
---
---
অভীক মুখার্জী
