Aug 21, 2020

মৌলবাদিদের হুমকিতে বাংলাদেশের সংবিধান থেকে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম বাদ দিতে করা রিট প্রত্যাহার

মৌলবাদিদের হুমকিতে বাংলাদেশের সংবিধান থেকে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম বাদ দিতে করা রিট প্রত্যাহার


বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ বাংলাদেশের সংবিধান থেকে রাষ্ট্র ধর্ম "ইসলাম" বাদ দিয়ে বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান অনুযায়ী "ধর্মনিরপেক্ষতা" পুনঃসংযুক্তির জন্য বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নিকট আইনী নোটিশ পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু অশোক ঘোষ বাবু সেই নোটিশ নিজে থেকেই প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হলেন। সংবাদমাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন, শাহরিয়ার কবীর, রানা দাসগুপ্তদের মত কিছু ব্যক্তিবর্গের আশ্বাসেই নাকি তিনি তার আইনী নোটিশ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। কিন্তু বাস্তব সত্য আমরা সকলেই উপলব্ধি করতে সক্ষম।
রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম


 সংবাদমাধ্যমে রাষ্ট্রধর্ম বাদ দেওয়ার খবরটি প্রকাশিত হতেই বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ (মুসলিম) যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন তাতে বোঝা যায়, বাংলাদেশকে পূর্ণাঙ্গ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তোলা সম্ভব নয়। অশোক কুমার ঘোষ নিজের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই আইনী নোটিশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে তা বলা বাহুল্য। সংবাদমাধ্যমে অশোক ঘোষ কর্তৃক রাষ্ট্রধর্ম প্রত্যাহারের নোটিশের খবরটি আসতেই তার ছবি, ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বার, বাসার ঠিকানা ও ফেসবুক আইডি ভাইরাল হয়ে যায়। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ ছাড়া সকলেই অশোক কুমার ঘোষের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক প্রচার চালিয়েছে, তার ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধনের ছবিও আমরা দেখেছি! উনার ফেসবুক আইডিতে উগ্রবাদী মুসলমানরা নানারকম হুমকি ধামকি দিয়ে মন্তব্য করেছে, A K Ghosh নামের আইডিটি সম্ভবত তারা রিপোর্ট দিয়ে বন্ধ করে ফেলেছে, উনার ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারে হুমকি ধামকি দিয়ে কল আসাটাও অসম্ভব নয়।

১৯৮৪ সাল বাংলাদেশে মিলিটারি শাসন জারি করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখর করেন জেনারেল হুসেন মুহাম্মদ এরশাদ। ক্ষমতায় টিকে থাকতে ধর্মান্ধ মুসলমানদের হাত করার উদ্দেশ্যে এরশাদ বাংলাদেশের সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা একপ্রকার তুলে দিয়েই রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, বিসমিল্লাহির রাহমানির রহিম, রবিবারের বদলে শুক্রবার সরকারী ছুটি ও বাংলা সনের তারিখ ভারতীয় বাঙালীদের থেকে ভিন্ন করার উদ্দেশ্যে পরিবর্তন করে দেন। ব্যক্তিজীবনে চরম উশৃঙ্খল ও ধর্মবিমূখ এই স্বৈরাচারী শাসক ধর্মকে যে কেবল ব্যবহার করেছিলেন তা সেকালেও সব মানুষই বুঝেছিলেন। অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে সংবিধান সংশোধনীর নামে দেশের গণতন্ত্রকে হত্যার এই নীলনকশা তৎকালীন বিএনপি, আওয়ামীলীগ এমনকি জামাত পর্যন্ত মেনে নেয়নি। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংযুক্তির প্রতিবাদে বিএনপি সারাদেশব্যপী হরতালের ডাক দিয়েছিল। অথচ আজ ২০২০ সালে এসেও এতবার ক্ষমতার পালাবদল হওয়া সত্ত্বেও কোনো দলই স্বৈরশাসক এরশাদ কর্তৃক অবৈধ সংশোধনীর সংস্কার করেনি। কারণ ৮৪ থেকে ২০২০ পদ্মায় অনেক জল গড়িয়েছে। বাংলাদেশে হিন্দুদের শক্তি আরো খর্ব হয়েছে, রাজনীতিতে তারা আজ আরও বেশি উপেক্ষিত। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ আজ আরও বেশি সাম্প্রদায়িক হয়ে উঠেছে। জনৈক অশোক কুমার ঘোষ সবদিক টা বিবেচনা না করেই আকাশ কুসুম স্বপ্ন দেখে ফেলেছিলেন, যার অপমৃত্যু ঘটতে বেশি সময় লাগেনি এবং তা প্রত্যাশিতই ছিল।
বিশ্বে ৫৭ টি মুসলিম প্রধান দেশ রয়েছে যার মধ্যে ২৪ টি দেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। বিশ্বের একমাত্র হিন্দুরাষ্ট্র ছিল নেপাল, নেপালের কম্যুনিস্ট সরকার এসে তা বাতিল করে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে। তসলিমা নাসরিন তার ফেসবুক পোষ্টে লিখেছেন, "আমার আত্মজীবনীর যে খণ্ডটিতে রাষ্ট্রধর্ম না থাকার পক্ষে আমি মত ব্যক্ত করেছিলাম, সেই খণ্ডটি পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রণ্ট সরকার নিষিদ্ধ করেছে ২০০৩ সালে। এমনিতে কমিউনিস্টরা রাষ্ট্রধর্ম মানেন না, কিন্তু রাষ্ট্রধর্ম যদি ইসলাম হয়, তাহলে তাঁদের আপত্তি নেই।"

১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে ভারতবর্ষ ভাগ হয়ে দুটো স্বাধীন দেশের জন্ম হল, ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তান অপরটি গণপ্রজাতন্ত্রী ভারত! একটি রাষ্ট্রের মূলমন্ত্র ইসলাম অপরটির গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা! কী আজব তাই না? ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ভেঙে জন্ম হল আরেকটি দেশের যারও মূলমন্ত্র ছিল গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা, কিন্তু তার স্থায়িত্ব হল মাত্র ৪ বছর। ১৯৭৫ সালেই বাংলাদেশের গণতন্ত্র ভূলুণ্ঠিত হল স্বৈরাচারীদের হাতে। অথচ ৪৭ ও ৭১ সালে দুই দুইবার গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে টিকিয়ে রাখতে সবচেয়ে বেশি বলিদান দিতে হয়েছে ব্ঙালী হিন্দুকে, এত বলিদানের পরেও তা টিকিয়ে রাখা যায়নি।

আজ ভারত গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। ভারতের সংবিধান আজও অক্ষত। ৭৩ বছরে একটি বারের জন্যেও ভারতে সামরিক শাসন জারী হয়নি, অথচ পাকিস্তান ও বাংলাদেশে বহুবার তা হয়েছে। অনেকেই বলবেন, ভারতে নামেই ধর্মনিরপেক্ষতা টিকে আছে বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি নেই। তাদেরকে বলি, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে এই নামমাত্রই ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠা করে দেখান। আর যদি বলেন, গণতন্ত্রের অর্থই হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ যা চাই তাই হবে তো ভারতে গণভোটের দাবি তোলা হোক, দেশ ধর্মনিরপেক্ষ হবে নাকি হিন্দুরাষ্ট্র হবে। তারপর বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর রায় মেনে ভারত কে হিন্দুরাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করা হোক।

Share this